Sunday, July 5, 2020

মরহুম সফিক উদ্দিন আহমেদ ও তার পরিবার

(লেখাটা মূলত সফিক উদ্দিনের কনিষ্ট পুত্র মনির উদ্দিনের ব্যক্তিগত একটি স্মৃতিচারণামূলক লেখার অনুলিখন)
পারিবারিক অ্যালবাম থেকে : সফিক উদ্দিন ও হবিবুন্নেসা  

রহুম সফিক উদ্দিন আহমেদ অতি সাধারণ এক ব্যক্তি ছিলেন| জনপ্রতিনিধি সাদৃশ্য কোনো কর্মকান্ড তার জীবলে ছিল না| অথবা বৌদ্ধিক বলে পরিচিতও ছিলেন না| তথাপি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবেশে আপন মাতার স্নেহ মমতায়  বাল্যকাল থেকে শিক্ষাগ্রহণে যে সংযম ও কষ্ট-সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে কাঙ্খিত লক্ষে নিজে প্রতিষ্ঠিত হন এবং পরবর্তী কালে পুত্র কন্যাদের প্রিতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন তার জন্য আপন জনদের কাছে তিনি নমস্য|

অলিখিত খন্ড খন্ড পারিবারিক সূত্র থেকে সংগ্রহ করে তার সম্মন্ধে চাল চিত্র প্রকাশের এই প্রয়াস মাত্র|

কাছাড় জেলার অধুনা শিলচর মহকুমার এক প্রত্যন্ত মৌজা দক্ষিণ কৃষ্ণপুর| এই মৌজার এক সাধারণ পরিবারে ১৮৯৪ সালে মরহুম সফিক উদ্দিনের জন্ম| তৎকালে এই প্রত্যন্ত মৌজাতে কৃষিযোগ্য জমির চেয়ে ঝোপ, জঙ্গল, জলাভূমি, ছোটোবড়ো টিলাভূমি বেশি ছিল| লোকবসতি ছিল অতি অল্প| নাথ যোগী সম্প্রদায়ের কিছু লোকের বসতি ছিল এই এলাকা| কাছাড় ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসার আগে কাচারী রাজার আমল থেকে সিলেট, জয়ন্তীয়া অঞ্চল থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু লোক নদীপথে আগর ব্যবসার উদ্যেশে এতদঞ্চলে এসে বরাক নদীর পাড়ে বসতি স্থাপন করেন|

১৮৮৩ সালে কাছাড় ডেপুটি কমিশনারের রেভিনিউ বিভাগের এক সংগ্রাহায়িত নথিতে পাওয়াযায়, তারা ১৩ সদস্যের পরিচয় সম্বলিত এক 'কবুলিয়ত নামা' দিয়ে ডেপুটি কমিশনারের কাছ থেকে বিভিন্ন শর্তে ১৫ বছরের মেয়াদে ত্রিমাসিক কর দিয়ে, ১ নম্বর মহালে (মৌজা দক্ষিণ কৃষ্ণপুর) আগর তেল নিষ্কাশনের জন্য অনুমতি লাভ করেন| ওই ব্যক্তিবর্গের অন্যতম দুলাইমিয়া বড়ভূঁইয়া, পিতা মালিমিয়া বড়ভূঁইয়া সফিক উদ্দিনের পূর্বপুরুষ বলে জানা যায়| সফিক উদ্দিনের পিতা ছিলেন ইন্জান আলী| ইন্জান আলীর পিতা জীবিত থাকাকালীন ইন্জান আলীর মৃত্যু হওয়ায় ইসলামিক নিয়মে সফিক উদ্দিন পিতার বিষয়-সম্পত্তির  অধিকার থেকে বঞ্চিত হন|

সফিক উদ্দিন বাল্যকাল   থেকে পড়াশুনার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন| তার মাতা পার্শবর্তী সোনাবাড়ীঘাট মৌজার অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবার থেকে ছিলেন| তিনি নিজের ও সন্তানদের হীনতর অবস্থা বিবেচনায় পুত্র সফিক উদ্দিন ও তার ছোট এক বোন নিয়ে পিতৃগৃহে চলে যান| ব্রিটিশ শাসনের প্রথম থেকে এই অঞ্চলের শিক্ষাদীক্ষা ও রাস্তাঘাটের অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হতে থাকে| দূরবর্তী নরসিংপুর মৌজায় এম ভি স্কুল প্রতিষ্টিত হয়ে প্রাথমিক থেকে ষষ্ঠ ম্যান পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়| সফিক উদ্দিনের মা, পুত্রকে এই স্কুলে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে জায়গীর রেখে পড়া চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন| অনুমান, ১৯০৩ সালে সফিক উদ্দিন এম ভি পাস্ করেন| সফিক উদ্দিনের মাতা পুত্রকে শিলচর সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন সেখান থেকে ১৯১২ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাস্ করেন|
পারিবারিক অ্যালবাম থেকে: মেট্রিক সার্টিফিকেট| 
তৎকালীন সময়ে মেট্রিক সার্টিফিকেট কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হত

এতদঞ্চলে কলেজের বিশেষ সুবিধা না থাকায় মাতার পরামর্শ মত কলকাতা গিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে আই এস সি কোর্সে ভর্তি হন| ডাক্তারি পড়ার আগ্রহ ছিল| বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নারকেলডাঙা  অঞ্চলে এক ছাত্রমেসে থেকে কলেজের পড়াশুনা করছিলেন| সফিক উদ্দিনের মাতা বহু কষ্ট স্বীকার করে পুত্রের কলেজের শিক্ষার খরচ যোগাড় করতেন কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে কলেজের ব্যয় নির্বাহ করতে অসমর্থ হওয়ায় সফিক উদ্দিন কলেজ ছেড়ে চলে আসেন| পরে কাছাড়ের কাঠিগরা স্কুলে ইংরেজি ও অংকের শিক্ষক পদে নিযুক্তি পেয়ে সেখানে চলে যান| সেখানে থাকাকালীন কিছু টাকার সংস্থান করে, আপন চাচা ও ভ্রাতা সম্পর্কিত একজনের কাছ থেকে নিজের পৈতৃক বাড়ির এক বিঘা দুই কাঠা পরিমান জমি ক্রয় করে ঘর তৈরীক্রমে নিজেদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন| 

ইতিমধ্যে সাংসারিক জীবন আরম্ভ করে  পুত্রকন্যাদি লাভ করেন| সেই সময় আসাম সরকারের অধীন কারা বিভাগে এসিস্টেন্ট জেলার পদে নিয়োগ পেয়ে গৌহাটি জেলে কাজে যোগ দেন| অর্থনৈতিক অবস্থার সামান্য উন্নতি  হলে তিনি পুত্র কন্যাদের শিক্ষার ব্যাপারে মনোযোগ দেন| স্ত্রী ও মাতার তথ্যাবধানে স্থানীয় এম ভি স্কুলে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন|

ক্রমে তিনি গৌহাটি জেল থেকে বদলি হয়ে বিভিন্ন সময়ে শিবসাগর, ডিব্রুগড়, ধুবড়ি জেলে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেলার পদে কাজ করেন ও পরে যোরহাট জেলে পদোন্নতি পেয়ে জেলার হিসাবে যোগ দেন; সেখান থেকে নগাঁও জেলে বদলি হন। সময় আনুমানিক ১৯৪২-৪৩ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের আতঙ্কজনক অবস্থা। ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন অত্যন্ত তীব্র। এই সময় সফিক উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র সিলেট এম সি কলেজ থেকে সম্মানের সাথে বি এ পাশ করেন।সেসময় যুদ্বে যোগদানের জন্য সরকারের তরফ থেকে আহ্ববান জানানো হয়। সফিক উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র, রফিক উদ্দিন, প্রথম শ্রেণীর কমিশনে (কিনস কমিশনার) সিলেকশন পেয়ে প্রাথমিক ট্রেনিং সমাপ্ত করে যুদ্ধক্ষেত্রে জয়েন করার কলের অপেক্ষা করছিলেন। ১৯৪৪ সালে প্রথম থেকেই নওগাঁ জেলে থাকাকালীন সফিক উদ্দিনের স্বাস্থ্য ক্রমশঃ খারাপ হতে শুরু করে। কারা কর্তৃপক্ষের থেকে সিভিল সার্জন পরীক্ষা করে শীঘ্র গল ব্লাডারের পাথর অপারেশন করার পরামর্শ দেন তাই তিনি চিকিৎসার জন্য শিলচর যাওয়া মনস্থ করেন। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বড় পুত্রকে যুদ্ধে যোগদানে বারণ করেন এবং শিলচর বদলির আবেদন করেন। আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় দীর্ঘ ছুটি নিয়ে শিলচর বাড়ি আসতে প্রস্তুত হলেন।  সফিক উদ্দিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুত্র শিলচর সরকারি বালক বিদ্যালয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছিলেন। এসময় শশুরের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ কৃষ্ণপুর মৌজার নাথ-বড়ভূঁইয়া পদবীর এক ব্যক্তির বাড়ি, পঞ্চাশ বিঘার উর্ধে জমি সহ ক্রয় করে নিজস্ব বাড়ি তৈরি ক্রমে সকল পুত্র কন্যাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। জুন মাসের প্রথম দিকে, জ্যেষ্ঠ পুত্র রফিক উদ্দিনকে নিয়ে শিলচর চলে আসেন। সেই সময় দিল্লির ভাইসরয় অফিস থেকে সফিক উদ্দিনকে ব্যক্তিগত সম্মানের জন্য খান সাহেব উপাধি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
 
সরকার থেকে প্রাপ্ত সনদ, সাল ১৯৪৪  

সংবাদটি সকলকে আনন্দ দিলেও সফিক উদ্দিনের স্বাস্থ্য নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন ছিলেন।  আত্মীয় স্বজনদের পরামর্শ মতে তিনি জ্যেষ্ঠ পুত্রকে নিয়ে সিলেট হয়ে শিলং পৌছে সেখানকার রবার্ট হসপিটালের প্রখ্যাত ডাক্তার হিউজেসের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার পরীক্ষা করে  শীঘ্র অপারেশনের ব্যবস্থা নেন। ১৯শে জুন অপারেশন করে বৃহৎ একটা গল ব্লাডার স্টোন বাহির করেন। দীর্ঘদিনের অসুখ হওয়ায়, গল ব্লাডার সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হয় ও ২০ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। সেই সময় শিলচর - শিলং যাতায়াত সহজ ছিল না, ছিল এক সপ্তাহের পথ। শিলংয়ে পরিচিত কিছু লোকের সহায়তায় সফিক উদ্দিনকে লাম্পাবিং মুসলিম কবরস্তানে দাফন করা হয়।

পারিবারিক অ্যালবাম থেকে শিলং কবরস্তানের ছবি। ২০১০ সালে নেওয়া ছবি। কবর অচিহ্নিত

বাড়ির শোকাবহ অবস্থা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসার পর, পুত্র রফিক উদ্দিন প্রাদেশিক সরকারের অধীন টেক্সটাইল বিভাগে উপপরিদর্শক চাকরি পান ও বাড়ির হাল ধরেন। ক্রমে, দ্বিতীয় পুত্র বশির উদ্দিন, সিলেট এম সি কলেজ থেকে আই এস্সি  পাশ করে ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস ডিগ্রি লাভ করে  ভারতীয় সেনার  মেডিকেল  বিভাগে ১৭ রাজপূত রেজিমেন্টে যোগ দেন| অল্প কয়েকবছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করে বশির উদ্দিন, সেনা বাহিনী ছেড়ে ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজ থেকে চক্ষু চিকিৎসায় পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করে আসাম সরকারের চাকরিতে যোগ দেন। 


রফিক উদ্দিন আহমেদ, বর্তমানে নিউয়র্কের বাসিন্দা 
  
1947 এ দেশভাগের সময় রফিক উদ্দিন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে বদলি হয়ে চলে যান। পরবর্তীতে সেখানকার সরকারের মনোনয়ন পেয়ে আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডমিনিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে সরকারের জল ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন পরিষদে ডেপুটি চিফ হিসাবে নিযুক্তি পান ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ হওয়ার পর উক্ত সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করে অবসর গ্রহন করেন।


পারিবারিক অ্যালবাম থেকে। মরহুম সফিক  উদ্দিনের দ্বিতীয় কন্যার বিবাহের নিমন্ত্রণপত্র

সফিক উদ্দিনের দ্বিতীয় পুত্র ডঃ বশির উদ্দিন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। তিনি ধুবড়ি হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল সুপার হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত হন। তার তিন কন্যা ও সকলেই উচ্চ শিক্ষিতা ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত।

সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন ডঃ বশির উদ্দিন আহমেদ| ছবিটি সম্ভবত ১৯৫৮-৫৯ সালের 


তৃতীয় পুত্র রশিদ উদ্দিন আহমেদ একটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ কয়েকবছর চিকিৎসাধীন থাকায় কলেজশিক্ষায় বিশেষ অগ্রসর হতে পারেন নি। সুস্থ হওয়ার পর তিনি এলাকায় সমাজসেবা ও শিক্ষা প্রসারে মনোনিবেশ করেন। 

রশিদ উদ্দিন আহমেদ ও মবু আহমেদ


রশিদ উদ্দিন আহমেদের সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রবল ছিল। সোনাবাড়ীঘাটের গ্রামবাসীদের আগ্রহে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে প্রথমে একটি এম ই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন - যেটাকে ক্রমশঃ উন্নত করে হাইস্কুলে রূপান্তরিত করেন। বিরাট এই অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের মেট্রিক পর্যন্ত পড়ার এটাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান রূপে গণ্য হয়। সকল শ্রেণীর জনসাধারণের সহযোগিতা ও স্থানীয় বিধায়ক সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিধায়ক মইনুল হক চৌধুরীর সাহায্যে  ও পরামর্শে স্কুলটির ক্রমশঃ উন্নতি হয়ে মইনুল হক চৌধুরী হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। যে স্কুলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালে হাতে গুনা কয়েকজন ছাত্র নিয়ে, এম ই স্কুল রূপে, সেটা সাতের দশকের শেষে কয়েক শত ছাত্র নিয়ে হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুল হিসাবে আজও এলাকার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। রশিদ উদ্দিনকে দুবার স্কুল পরিচালন কমিটির প্রধান মনোনীত করা হয়েছিল। তার বি এ ডিগ্রি না থাকায়, হাই স্কুলের এম ই সেকশনের শিক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সকলের কাছে মাস্টার সাহেব অথবা রশিদ মাস্টার বলে পরিচিত ছিলেন।
পারিবারিক এলবাম থেকে|  স্কুল পরিচালন সম্পর্কিত কোনো এক সভা
(সম্ভবত সত্তরের দশকের ছবি)


মাস্টার সাহেব বা রশিদ মাস্টার গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের সংস্কার ও স্কুলগৃহ নবরূপে নির্মানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি তার জন্মের সমসাময়িক বা আগের। 

২১৯ নম্বর দক্ষিণ কৃষ্ণপুর নিম্ন-প্রাথমিক বিদ্যালয় গৃহ । সাম্প্রতিক ছবি (২০১৯)

দক্ষিণ কৃষ্ণপুরের প্রবীণদের থেকে জানা যায় গ্রামের প্রথম মসজিদ স্থাপন হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, বরাক নদীর পাড়ে। পরবর্তীতে বন্যা, নদীভাঙ্গন ইত্যাদির কারণে মসজিদটি গ্রামের পশ্চিমদিকে স্থাপন করা হয়। দূরদর্শী কিছু গ্রামবাসী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মসজিদের পাশেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্টান স্থাপন করেন, যাকে মক্তব বলা হত। প্রথম দিকে মূলত কিছুটা অক্ষরজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল, সরকারি রেকর্ড মতে স্থাপিত ১৯২৮ সালে। কয়েকদশক পরে মক্তবে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন গৃহ ও অধিক জায়গার দরকার হয়। স্থানীয় মুরব্বিদের অনুরোধে রশিদ উদ্দিন  ষাটের দশকে, নিজেদের পারিবারিক জমিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান নতুন করে স্থাপন করতে গ্রামবাসীদের সাথে উদ্যোগী হন। মক্তব ও পাঠশালা - দুই নামেই তাকে ডাকা হত|  ১৯৮৩ সালে, ঝড়ে স্কুলগৃহ ভেঙে যাওয়ার পরে, জনগণের অনুরোধে স্কুলগৃহটি রশিদ উদ্দিনেরই দানকৃত অন্য জমিতে, গ্রামের কেন্দ্রস্থলের দিকে, নবরূপে স্থাপিত হয়। স্কুলটি এখন ২১৯ নম্বর দক্ষিণ কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। 


মনির উদ্দিন আহমেদ

সফিক উদ্দিনের চার পুত্রদের মধ্যে সর্বকনিষ্ট পুত্র মনির উদ্দিন। তিনি শিলচর গুরুচরণ কলেজ থেকে আই এস সি পাশ করেন। উক্ত কলেজেই বি এ পড়াকালীন আসাম সরকারের সহকারী পরিদর্শক  চাকরিতে যোগ দেন| শিক্ষানুরাগ ও জ্ঞানচর্চায় তার আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদানের জন্য তিনি গ্রামবাসী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে খুবই শ্রদ্দেয়। তিনি আসাম সরকারের খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগে সততা ও সুনামের সঙ্গে চাকরি করে অবসর গ্রহণ করেছেন। 



সফিক উদ্দিনের চার কন্যার মধ্যে বড়জন ছিলেন বিদূষী মহিলা, তিনি কাজিডহরের মরহুম ডঃ মসাইদ আলীর সহধর্মিনী।  মসাইদ আলী ছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর সোনাই অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায় থেকে একমাত্র পাশ করা ডাক্তার। তিনি বেরি হোয়াইট  মেডিকেল স্কুল (পরবর্তীতে যেটা ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজ) থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন। ডঃ আলী শিলচর সিভিল হাসপাতালের সুপার ছিলেন।

পরিবারের এককন্যা বিবাহ সূত্রে বাংলাদেশবাসী। একমাত্র জীবিত এক কন্যা বর্তমান হাইলাকান্দিবাসি। সর্বকনিষ্ট কন্যা আটের দশকে অকাল প্রয়াত।


শত বৎসরের আগে সফিক উদ্দিন নামের যে মহীরুহের জন্ম হয়েছিল শিলচরের শহরের অদূরে কৃষ্ণপুর গ্রামে, আজ তার শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবীতে।


Saturday, April 4, 2020

আঁকিবুকি


লকডাউনের দিনগুলো - রিফাত যা দেখছে 

Saturday, February 29, 2020

দক্ষিণ কৃষ্ণপুর টিলা মসজিদের ইতিবৃত্ত

(এটা অগ্রজ ও শিক্ষক মঈন উদ্দিন বড়ভুঁইয়া কর্তৃক লিখিত ও সম্পদিত একটা লেখা)

প্রায় তিনশত বৎসর পূর্বে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে কৃষ্ণপুর গ্রামে লোক বসতি শুরু হয়। বিভিন্ন তথ্য  হইতে জানা যায় যে এই গ্রামের আদি বাসিন্দারা ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। গ্রামের কৃষ্ণপুর নামকরণ থেকেও এই ইঙ্গিত মিলে। যোগাযোগ ও কর আদায়ের সুবিধার্থে গ্রামটিকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিন কৃষ্ণপুর।
আমি আজ দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের আদি বাসিন্দা ও প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের ইতিহাস পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি । পাঠক পাঠিকাদের কাছ হইতে  সুপরামর্শ পেলে লেখাটির সংশোধন ও সংযোজন করার  জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ  রইলাম।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে এই গ্রামের আদি বাসিন্দারা ছিলেন নিম্নবর্ণের হিন্দু। বিশেষ করে নাথ-যোগী, নমঃশুদ্র, শুক্লবদ্য, মনিপুরী, শীল  এমনকি তন্তুবাই সম্প্রদায়ের লোকজনের এইগ্রামে বসবাস ছিল। গ্রামে যোগীপাড়া বলে একটি পাড়া এখনো বিদ্যমান (যদিও কোনো নাথ-যোগী সম্প্রদায়ের লোক নেই) - বাসিন্দারা সবাই মুসলমান। কালের স্রোতে ধীরে ধীরে এই গ্রাম থেকে হিন্দুরা চলে যান। কাহারো কাহারো মোতে এই গ্রামের বাসিন্দারা হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং গ্রামের বাসিন্দারা তাহাদেরই বংশধর।

একসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণবৈষম্য প্রবলভাবে মাথাচড়া দিয়ে উঠেছিল। নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন; সমাজে তাদের স্থান, মান কিছুই ছিল না। একই ধর্মে দীক্ষিত হয়েও তারা ছিলেন উপেক্ষিক ও লাঞ্চিত। তখন গ্রামের কিছু প্রবীণ, দূরদর্শী ও বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির মনে সামাজিক ও ধর্মীয় মর্যাদার অনুভূতি সঞ্চারিত হল। তারা উচ্চ-নীচ জাতপাত ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েগেলেন। ইসলাম ধর্মে বর্ণভেদ ও ধনীদরিদ্র ইত্যাদির কোনো স্থান নেই। ইসলামের এই সাম্যবাদী বৈশিষ্ট দেখে আরো বেশি বেশি লোক আকৃষ্ট হলেন। ক্রমে গ্রামটি হয়ে গেল মূলত  মুসলমান সম্প্রদায়ের। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে যে কয়েকটি হিন্দু পরিবার ছিল, তারা ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার্থে অন্যত্র চলে যাওয়ায় গ্রামটি মুসলিম গ্রাম হিসাবে চিহ্নিত হয়।   

কথিত আছে যে গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে বরাক নদীর তীরে প্রথমে সাতটি পরিবার শ্রীহট্ট জেলার পার্শ্ববর্তী কোন এক স্থান থেকে এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। যার ফলে এই পাড়ার লোকেদের "সাত ঘরিয়া" নামে পরিচিতি ছিল, অন্য পাড়ার লোকজনদের কাছে। যদিও গ্রামের ওই প্রান্তের নাম কেমলা গ্রাম। কেমলাগ্রামের মানুষজন ছিলেন অমায়িক, চিন্তাশীল ও দূরদর্শী। বর্তমান কেমলাগ্রাম গ্রামের ঐতিহাসিক নিদর্শন - যেমন টিলা মসজিদ, মাজারখানা, মাদ্রাসা, ঈদগাহ এবং প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্টান তাহাদেরই মস্তিস্কপ্রসূত।

কেমলাগ্রামের কিছু চিন্তাশীল ও দূরদর্শী ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় ধর্মকর্ম পালনের জন্য বরাক নদীর তীরে প্রথমে স্থাপন করা হয় একটি মসজিদ এবং মৃতদেহ কবরস্থ করার জন্য মসজিদের পাশেই স্থাপন করা হয় একটি কবরস্থান (বর্তমানে যেটা কেমলাগ্রাম মাজারখানা)। প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায় যে কবরস্থানে একজন পীরসাহেবকে কবরস্থ করা হয়েছিল বলে ওই কবরস্থানকে অনেকে বলতেন "মোকাম"। মসজিদ ও "মোকাম" কোন সনে তৈরি করা হয়েছিল তার কোন সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও, প্রবীণ ব্যক্তিদের অনুমান মতে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মসজিদটি তৈরী হয়। প্রথম কয়েকবছর ঐখানে থাকার পরে বাৎসরিক বন্যার কারণে ও বর্ধিত জনসংখ্যার সুবিধার্থে, মসজিদটি স্থানান্তরিত করা হয় কেমলাগ্রামের এক টিলাভূমিতে। মসজিদটি এখন দক্ষিণ কৃষ্ণপুর টিলা মসজিদ নামে পরিচিত|

মসজিদগৃহ স্থানান্তরের পরে এলাকার চিন্তাশীল ও দূরদর্শী ব্যক্তিদের মাথায় আসে পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষারও প্রয়োজন। কেমলাগ্রামের মসজিদ সংলগ্ন স্থানে (মসজিদকে কেন্দ্র করে বললেও অত্যুক্তি হবে না) স্থাপিত হয় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রথমটি হল - ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বর্তমানে সেখানে আছে দক্ষিণ কৃষ্ণপুর আহমদিয়া মাদ্রাসা), দ্বিতীয়টি আধুনিক শিক্ষার জন্য, দক্ষিণ কৃষ্ণপুর মক্তব নামের, একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গ্রামের মক্তব প্রথম প্রজন্মের জন্য এলাকার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল - যেটা পরবর্তীতে গ্রামবাসীর সুবিধার্থে স্থানান্তরিত হয় জনাব রশিদ উদ্দিন আহমেদ সাহেবের দানকৃত জমিতে।মক্তবটি বর্তমানে দক্ষিণ কৃষ্ণপুর ২১৯ নম্বর নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। সরকারি রেকর্ডে স্কুলটি ১৯২৫ ইংরেজি তারিখে স্থাপিত। ১৯৮৩ সালে ঝড়ে স্কুলগৃহটি ভেঙে গেলে, নতুন করে, জনাব রশিদ উদ্দিনেরই দানকৃত অন্য জায়গায়, গ্রামের কেন্দ্রস্থলে, নতুন করে স্থানান্তরিত হয়। দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এই গ্রামের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা এখনো বিদ্যমান। এই মক্তবের ছাত্ররা দেশ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গ্রামের সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন। 

   জঙ্গলাকীর্ণ টিলাভূমির একটি অংশ সমতল করে , মসজিদের পাশেই ঈদের নামাজের জন্য স্থাপন করা হয় ঈদগাহ (দ :কৃষ্ণপুর ঈদগাহ)।  প্রথম দিকে এটার  আয়তন ছিল ছোট - পরবর্তীতে টিলার আরো অংশ কেটে ঈদ্গার আয়তন বৃদ্ধি করা হয়। ঈদগাহের উন্নয়নে গ্রামের সন্তান প্রয়াত এনামুল হক বড়ভুঁইয়া ওরফে এনামুল ইঞ্জিনিয়ারের অবদান গ্রামবাসীরা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন। 

এই মসজিদ, ঈদগাহ আর মাদ্রাসার জমির দখলদার মালিক হিসাবে ছিলেন জনৈক চন্দান মিয়া ও এতিম আলী (পিতা সোনা মিয়া) নামের দুই ব্যক্তির পূর্বপুরুষেরা এবং এতিম আলী (পিত দুলাই মিয়া) নামের আরো এক ব্যক্তির পূর্ব পুরুষেরা। ঐ ব্যক্তিগণ মসজিদ, ঈদগাহ ও মাদ্রাসার দখলকৃত জমি নিঃস্বার্থে দান করেন। তা ছাড়াও মসজিদ সংলগ্ন কিছু চাষের জমি দান করেন মসজিদের আয়ের উৎস হিসাবে। উল্লেখ্য, তৎকালীন সময়ে বেশিরভাগ দান ছিল অলিখিত, মৌখিক। সরকারি দলিল না থাকায়, মসজিদের অনেক জমি পরবর্তীতে মসজিদের হাতছাড়া হয়ে যায়। বর্তমানে মূল টিলাভূমির পাশের কিছু জমি মসজিদের নামেই এবং দখলে আছে।   দুলাই মিয়ার পুত্র এতিম আলী ১৯৪৭ সনে একটি উইল মারফত তার দান মসজিদের মানে নথিভুক্ত করেন

মসজিদ গৃহটি প্রাথমিক অবস্থায় কাঁচা গৃহ ছিল - তারপর গ্রামবাসীরা চুনাপাথরের ভারী দেওয়াল দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন। অনুমান বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মসজিদগৃহের নির্মাণ শেষ হয়।
দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রবীণতম ব্যক্তি (বর্তমান আমেরিকাবাসী) জনাব রফিক উদ্দিন ৯৩ বছর বয়সে মাতৃভূমির টানে প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হতে গ্রামে আসেন। ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর মসজিদে জুম্মার নামাজের পর আমাদের সাথে এক স্মৃতিচারণমূলক আলাপচারিতায় বসেন। উনার স্মৃতি থেকে জানা যায় যে মসজিদের পুস্করিণীর ঘাট পাকা করা হয়েছিল ১৯৩৮ সালে।   উনার পিত মরহুম  সফিক উদ্দিন আহমেদ সাহেব উক্ত কাজের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা দেন করেছিলেন ( বর্তমান বাজার মূল্য ধরলে যা প্রায় ৫১ হাজার হবে)। উনার পিতা মরহুম সফিক উদ্দিন তৎকালীন ব্রিটিশামলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত পুলিশ আধিকারিক হিসাবে কর্মরত হিসাবে ১৯৪৪ সালে পরলোক গমন করেছিলেন। রফিক উদ্দিন নিজে ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্রিটিশ আমলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। 
জানা যায় - মসজিদ গৃহটি সংস্কার করে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছিল ১৯৫৫ ইংরেজিতে বা ১৩৬২ বাংলায়। তখন মসজিদ সংস্কারের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মরহুম মৌলানা আসদ আলী সাহেব। মৌলানা আসদ আলী সাহেবের আপ্রাণ প্রচেষ্টা ও কেমলাগ্রাম এলাকার প্রত্যেক পরিবারের মানুষের আর্থিক সহায়তা ও কায়িক পরিশ্রমের ফলে মসজিদ গৃহটি একটি সুন্দর পাকা মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছিল। মসজিদের দেওয়ালে তখনকার বেশ কিছু কারুকাজও ছিল।

শুরু থেকে মসজিদ পরিচালনার জন্য একটি অলিখিত কমিটি ছিল। এই কমিটি গঠিত হত গ্রামের কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ লোকদের নিয়ে। কমিটিতে থাকতেন একজন মুতাওয়াল্লী ও একজন তত্বাবধায়ক সম্পাদক| প্রয়োজনে কমিটির সভা বসত, আলোচনা হত, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত ও বাস্তবায়িত হত এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুমোদিত হত সর্বসম্মতিক্রমে। কিন্তু সব সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ইত্যাদি ছিল অলিখিত। কমিটিগুলোর কার্যপ্রণালী যেহেতু অলিখিত ছিল, মসজিদ সম্পর্কে অনেক তথ্য কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।

এই মসজিদের লিখিত কমিটি গঠন করার তথ্য পাওয়া গেছে ১৯৬৯ ইংরেজি থেকে। তখনকার কমিটিগুলোতে প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকতেন। ১৯৬৯ সালে কমিটিতে মুতাওয়াল্লী ছিলেন জনাব আনর আলী বড়ভুঁইয়া ও তত্ববধায়ক সম্পাদক ছিলেন জনাব ফজলুল হক বড়ভুঁইয়া। কমিটি মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব সুন্দর ও সুষ্টভাবে দীর্ঘকাল পালন করে।
সাম্প্রতিক অতীতে ২০০৬ সালে গ্রামের নবপ্রজন্মের যুবকরা মসজিদগৃহ সংস্কারের উদ্দেশে মসজিদের সেবায় আগ্রহ প্রকাশ করলে এলাকার মুরুব্বীগণ অত্যন্ত খুশি হন এবং ২০০৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি সাধারণ সভার মাধ্যমে মসজিদ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব নব প্রজন্মের হাতে তুলে দেন। উক্ত সভায় মো: রহিম উদ্দিন লস্করকে সভাপতি ও ম: মঈন উদ্দিন বড়ভুঁইঞাকে সম্পাদক মনোনীত করে  এগারো সদস্যের একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। এটিই প্রথম যুবকদের দ্বারা পরিচালিত মসজিদ কমিটি। দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর, নতুন কমিটি পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে পুরোনো মসজিদ গৃহখানা ভেঙে বৃহতাকারে ও দ্বিতল বিশিষ্ট নতুন গৃহ নির্মাণ করা হবে।

নতুন কমিটির সিদ্ধান্তে সারা দিয়ে গ্রামের সকল মানুষ এগিয়ে আসেন। সরকারি চাকুরীজীবীরা তাদের একমাসের বেতন মসজিদের জন্য দান করেন। বাকিরা সাধ্য মত এক হাজার থেকে দশ হাজার স্বেচ্ছায় দান করেন। তা ছাড়া আসে পাশের অনেক সহৃদয় ব্যক্তি নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসেন।
সকলের সাহায্য ও সহযোগিতার উপর নির্ভর করে ২০০৭ ইংরেজির ২২ জানুয়ারি পুরাতন ভবনটি ভেঙে নতুন মসজিদ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর (ঈশান খুঁটি) স্থাপন করা হয়। দ্বিতলবিশিষ্ট  মসজিদ গৃহের ভিত্তি স্থাপন করেন মৌলানা তৈইবুর রহমান সাহেবমৌলানা আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া সাহেব। তারপর গ্রামের সর্বশ্রেণীর জনগণের উপস্থিতিতে কাজের অগ্রগতি ও উন্নতি কামনা করে দোয়া করা হয়।

সকলের দোয়া ও সহযোগিতা সহ অল্পদিনের মধ্যে মসজিদের প্রথম তলের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে মসজিদগৃহ নামাজ আদায়ের উপযুক্ত হয়। মসজিদের কমিটি আশা করেন অল্প দিনের মধ্যে বাকি কাজও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে - ইনশাল্লাহ।

মসজিদের আয়ের উৎস:
প্রাথমিক অবস্থায় মসজিদের পরিচালনার খরচ বহন করা হত -"মুষ্টি চাউল" বা "মুটি চাউল" দ্বারা। অর্থাৎ প্রতি পরিবার তাদের খাওয়ার চাউল থেকে এক মুঠো (মুষ্টি) চাউল রেখে দিতেন একটি পাত্রে। প্রতি সপ্তাহে মসজিদের মোয়াজ্জিন সাহেব ঘরে ঘরে গিয়ে সেই চাউল সংগ্রহ করে আনতেন। সেই চাউল বিক্রি করে মসজিদ পরিচালনার খরচ, মূলত ইমাম সাহেবের বেতন, মোয়াজ্জিন সাহেবের বেতন ইত্যাদি বহন করা হত। 

বর্তমানযুগে খরচের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সংগ্রহীত মুটি চাউলের দ্বারা মসজিদ পরিচালনার খরচ বহন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০১৩ র মার্চ থেকে প্রত্যেক পরিবার থেকে আর্থিক চাঁদা নেওয়ার নিয়ম চালু হয়। গ্রামবাসীর আর্থিক উন্নতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে প্রতি মাসে মসজিদের সংগ্রহ আশাব্যঞ্জক। মানুষ মসজিদে দান খয়রাত করতে আগ্রহী হওয়ায় মসজিদের ও সমাজের উন্নতি বাড়ছে সন্দেহ নেই। আল্লা যেন সবাইকে মসজিদমুখী রাখেন। আমিন।

বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী মসজিতে স্থায়ী ইমাম যারা ছিলেন:
১) মৌলানা আছির আলী সাহেব। সৈদপুরী। কার্যকাল ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭
২) মৌলানা আসদ আলী সাহেব, বড়বাউরি। কার্যকাল ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৩
৩) মৌলানা আরজুমন্দ আলী সাহেব। দক্ষিণ কৃষ্ণপুরী।কার্যকাল ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫
৪) মৌলানা হাফিজ মাহমদ আলী মজুমদার সাহেব। দক্ষিণ কৃষ্ণপুরী।কার্যকাল ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭
৫) মৌলানা ক্বারী হারিছ উদ্দিন সাহেব। সাতকরাকান্দি। কার্যকাল ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯
৬) মৌলানা আবু তালেব সাহেব, উত্তর কৃষ্ণপুরী।কার্যকাল ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০
৭) মৌলানা তজমুল আলী সাহেব। ধনেহরী। কার্যকাল ১৯৭০ থেকে ১৯৮০
৮) মৌলানা হুরমত আলী সাহেব, দক্ষিণ কৃষ্ণপুরী।কার্যকাল ১৯৮০ থেকে ১৯৯৭
৯) মৌলানা ক্বারী নঈম উদ্দিন সাহেব, দক্ষিণ কৃষ্ণপুরী।কার্যকাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২
১০) মৌলানা হাফিজ হামিদুল হোক সাহেব, বেরাবাকী। কার্যকাল ২০১২ থেকে -
[বি: দ্রঃ মৌলানা আছির আলী সাহেবের পূর্বের ইমাম সাহেবদের তথ্য পাওয়া না যাওয়ায়, উল্লেখ করা সম্ভব হচ্ছে না । মৌলানাদের কার্যকাল অধিকাংশ মৌখিক তথ্য থেকে অনুমান করে লেখা হয়েছে


সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী, লিখিত মসজিদ কমিটি:

কার্যকাল ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০
মোতওয়াল্লী : মো আনর আলী বড়ভূঁইয়া 
সম্পাদক: মো : ফজলুল হক বড়ভূঁইয়া 
কোষাধ্যক্ষ: মো: ইলিয়াস আলী লস্কর 
সদস্যবৃন্দ: প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ১৯৭১ থেকে ১৯৯৬
মোতওয়াল্লী : মো  মন্তজিম আলী বড়ভূঁইয়া 
সম্পাদক: মো : ফজলুল হক বড়ভূঁইয়া 
কোষাধ্যক্ষ: মো: ইলিয়াস আলী লস্কর 
সদস্যবৃন্দ: প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭
মোতওয়াল্লী : মো  তাহির আহমেদ  বড়ভূঁইয়া 
সম্পাদক: মো : ফজলুল হক বড়ভূঁইয়া 
কোষাধ্যক্ষ: মো: ইলিয়াস আলী লস্কর 
সদস্যবৃন্দ: প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ১৯৯৭ থেকে ২০০১
মোতওয়াল্লী : মো  রসিদ উদ্দিন আহমেদ 
সম্পাদক: মো : ফজলুল হক বড়ভূঁইয়া 
কোষাধ্যক্ষ: মো: ইলিয়াস আলী লস্কর 
সদস্যবৃন্দ: প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ২০০১ থেকে ২০০৬
সভাপতি: মো মনির উদ্দিন আহমেদ 
সহসভাপতি: মো সিরাজুল হক মজুমদার 
সম্পাদক: মো ফজলুল হক বড়ভূঁইয়া 
সহসম্পাদক: মো নিজাম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া 
হিসাব রক্ষক: মো মনির উদ্দিন আহমেদ 
সদস্যবৃন্দ: ১) মো সাইদুল হক বড়ভূঁইয়া ২) মো রবি মিয়া ৩) মো নিজাম উদ্দিন বড়ভুঁইয়া ৪) মো করিম উদ্দিন মজুমদার ৫) মো মঈন উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ৬) মো তমিজ উদ্দিন লস্কর ৭) মো রহমত আলী বড়ভূঁইয়া ৮) মো তাজ উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ৯) মো সেজাম উদ্দিন লস্কর ১০) মো রহিম উদ্দিন লস্কর ১১) মো কুটিমনি লস্কর ১২) মো নুরুল হক বড়ভূঁইয়া ১৩) মো সাহেব উদ্দিন বড়ভূঁইয়া 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ২৯-৯-২০০৬ থেকে ১৮-১০-২০০৭ 
সভাপতি: মো রহিম উদ্দিন লস্কর  
সহসভাপতি: মো নিজাম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া 
সম্পাদক: মো মঈন উদ্দিন বড়ভূঁইয়া 
সহসম্পাদক: মো ফারুক আহমদ লস্কর  
হিসাব রক্ষক: মো মনির উদ্দিন আহমেদ 
সদস্যবৃন্দ: ১) মো আক্তার হুসেইন ২) মো নিজাম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ৩) মো আইনুল হক বড়ভুঁইয়া ৪) মো কামরুল হক বড়ভুঁইয়া ৫) মো ছইদুল আলম লস্কর ৬) মো আব্দুল শাহিদ লস্কর ৭) মো জয়নুল হক বড়ভূঁইয়া ৮) মো পান্না লস্কর 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ১৮-১০-২০০৭ থেকে ১৮-৮-২০১০ 
সভাপতি: মো রহিম উদ্দিন লস্কর  
সহসভাপতি: মো কাইমুল হক বড়ভূঁইয়া 
সম্পাদক: মো মঈন উদ্দিন বড়ভূঁইয়া 
সহসম্পাদক: মো ফারুক আহমদ লস্কর  
হিসাব রক্ষক: মো মনির উদ্দিন আহমেদ 
সদস্যবৃন্দ: ১) মো আক্তার হুসেইন ২) মো নিজাম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ৩) মো আইনুল হক বড়ভুঁইয়া ৪) মো কমরুল হক বড়ভুঁইয়া ৫) মো ছইদুল আলম লস্কর ৬) মো আব্দুল শাহিদ লস্কর ৭) মো জয়নুল হক বড়ভূঁইয়া ৮) মো পান্না লস্কর 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ১৮-৮-২০১০ থেকে ১৩-১১-২০১১ 
সভাপতি: মো রহিম উদ্দিন লস্কর  
সহসভাপতি: মো কাইমুল হক বড়ভূঁইয়া 
সম্পাদক: মো ফারুক আহমদ লস্কর 
হিসাব রক্ষক: মো মনির উদ্দিন আহমেদ 
সদস্যবৃন্দ: ১) মো মঈন উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ২) মো আক্তার হুসেইন ৩) মো নিজাম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ৪) মো আইনুল হক বড়ভুঁইয়া ৫) মো কমরুল হক বড়ভুঁইয়া ৬) মো ছইদুল আলম লস্কর ৭) মো আব্দুল শাহিদ লস্কর ৮) মো জয়নুল হক বড়ভূঁইয়া ৯) মো সাহেব উদ্দিন লস্কর 

লিখিত মসজিদ কমিটি:
কার্যকাল ১৩-১১-২০১১ থেকে ...
সভাপতি: মো রহিম উদ্দিন লস্কর  
সহসভাপতি: মো কাইমুল হক বড়ভূঁইয়া 
সম্পাদক: মো আক্তার হুসেইন  
হিসাব রক্ষক: মো মনির উদ্দিন আহমেদ 
সদস্যবৃন্দ: ১) মো মঈন উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ২) মো ফারুক আহমদ লস্কর ৩) মো নিজাম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ৪) মো আইনুল হক বড়ভুঁইয়া ৫) মো কমরুল হক বড়ভুঁইয়া ৬) মো ছইদুল আলম লস্কর ৭) মো আব্দুল শাহিদ লস্কর ৮) মো জয়নুল হক বড়ভূঁইয়া ৯) মো সাহেব উদ্দিন লস্কর 




Wednesday, October 2, 2019

ফাতাবুয়াই

"সাদা রং.....কারেন্টে চলে.....পানি ঠান্ডা বরফ ওইযায়.....নাম বুলে......"... হাসির চোটে আমাদের বাড়ির সাহায্যকারীনি ফাতাবুয়াই কথাই শেষ করতে পারেন না। শেষে অতি কষ্টে হাসি চেপে বাবাকে জানালেন, বড়বাবুর বাড়ির আজব জিনিসটা নিয়ে - "..... নাম বুলে ফিরুজ"।

(আড়াই -তিন দশক আগের স্মৃতি)

Monday, April 1, 2019

রুদালি

"ও আল্লা ইতা কিতা করলায়........ও "রিমু" দেখিয়া যা, দেখিয়া যা.....তর বাফর মরার খবর হুনিয়া আমার বাড়ির বুড়া, ভালা একগু সার্টও পিনদিছেনা; অাতর (হাত) সামনে ওউ দাগ ফরা, চিতরি ফরা পানজাবি ওগু পিনদিয়া আইছে...হায় আল্লা ইতা কিতা করলায়....... " (পৌনঃপুনিক, খালি কোটমার্কে নামটা বদলাতে থাকবে)।

[ ১) তিনদশক আগে, গ্রামের একজন মারা যাওয়ার পর, আরেকজন পৌঢ়ার বিলাপ। অবশ্যই আবেগটা বিশুদ্ধ, কিন্তু শোকপ্রকাশেরও একটা প্রতিযোগীতা ছিল।
২) যারা বরাক উপত্যকার নন, তারা বুঝতে পারবেন না ]

Thursday, January 31, 2019

ভোটের স্মৃতি

নয় দশকের দ্বিতীয়ার্থে এ জি পি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে আমাদের ক্লাবের অনেকের সাথে আমিও ছিলাম| অগপ ভাল দল, তা নয়| প্রার্থী অশিক্ষিত ও গুন্ডাপ্রকৃতির ছিল কিন্তু ওর বক্তব্য ভাল লেগেছিল| কংগ্রেস প্রার্থী শিক্ষিতই ছিলেন কিন্তু কাছাড়ের বড় অংশের মুসলমান-কংগ্রেস নেতাদের মত, উনারও USP ছিল "রানা দেবে ভালা পাইন" বা "রানা দেবর কাছের মানুষ"| আর বিজিপি তখন গ্রাম কাছাড়ে দল হিসাবে ততটা শক্তিশালী ছিল না|

আমাদের মূল প্রতিপক্ষ ছিলেন নির্দল একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী| ভোটের আগে, আশেপাশের সব গ্রামের ক্লাব গুলোতে খেলাধুলার সামগ্রী বা পিকনিকের খরচ জুগিয়েছেন দাদা - কাজেই নির্দল বলে তিনি হেলাফেলার প্রার্থী ছিলেন না|

বন্ধুদের মতে, আমি নাকি ভাল পোস্টার লিখতে পারি| লোকসভায় কম: নুরুল হুদাকে ভোট দেওয়ার পোস্টার কিছু বানিয়েছিলাম তাতে বয়লাঢিলা খনি বিক্রি নিয়ে প্রতিবাদ করে একটা ছড়া ছিল, ভুলে গেছি, কিন্তু বিধানসভার ভোটের পোস্টারের কথা বেশ মনে আছে| একটা ছিল:
"পেট্টোল টাঙ্কির ভিতরে;
শরাব পাচার কে করে?"
যারা আইজল রোড আর মিজোরামের সাথে পরিচিত নন, তারা বুঝতে পারবেন না এর মানে| মিজোরাম কয়েকবছর আগে "ড্রাই" রাজ্য ঘোষণা করা হয়েছে| আর তখন শিলচরে যে মদের বোতল একশো টাকা সেটা লুকিয়ে মিজোরামে নিয়েযেতে পারলে তিনশো টাকায়ও বিক্রি হত| "ড্রাই রাজ্য" মিজোরাম অনেকের জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছিল, এর মধ্যে ছিলেন...যাকগে|

ভোটে অগপ জিতে ছিল| দাদাও আর নির্দল থাকেন নি| ভোটের পর দাদা একসর্বভারতীয় দলের কাছাড় কমিটির সভাপতি হয়ে ছিলেন - এখন অবশ্য সরাসরি রাজনীতিতে নেই|

Wednesday, January 30, 2019

বৃষ্টি না কান্না

আমার পরিচিত, আশেপাশের যারা সচ্ছল, তাদের প্রায় সবার শিশুসন্তান দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে ছিল/আছে আরেক শিশু শ্রমিক| একশিশুর জন্য বলিপ্রদত্ত আরেক শৈশব - এই সামান্য ব্যাপার আরকি| সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস অনেকসময় চোখ বন্ধ রাখতে সাহায্য করে| যেমন অনেকেই বলেন - "আল্লার হুকুম, কার রিজেক (অন্ন) কার ঘরে সেটা তিনিই ঠিক করে রেখেছেন"| না, কারোর বিশ্বাস ভুল কি ঠিক সেটা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়| 
বেশ কয়েকবছর আগে এক আত্মীয়ের বাসায় শুয়ে আছি, শীতের সকাল| পাশের বাসা থেকে একটা শিশুর কান্না শুনতে পাচ্ছিলাম - কান্নাটা অবশ্য কোনো বিপদের নয়, একটানা মনোটোনাস| মালকিনরা পরিচিত, জানলাম চর অঞ্চলের শিশুটির রিকশাচালক বাবা কয়েক মাস পর পর এসে শিশুটির শ্রমের তিন চারশো টাকা নিয়ে যায় | বাপজানের চলে যাওয়ার সময় শিশুটিও ভাবে এবার বাড়ি যাব, কিন্তু বোকাটা জানে না, মালকিনের ঘরটাই ওর ঘর| বাবাটাও চুপি চুপি, দেখা না দিয়ে পালায়| তারও চোখের কোন ভেজা থাকে|
আজ সকালে বৃষ্টির জন্য দেরি করে উঠেছি| অধোঘুমের ঘোরে একটানা একটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম| বৃষ্টির আওয়াজে নিউরোন কোষ পুরোনো কোনো সিগনালকে উদ্দীপিত করে থাকবে|


২৭ জানুয়ারী ২০১৯