Sunday, July 5, 2020

মরহুম সফিক উদ্দিন আহমেদ ও তার পরিবার

(লেখাটা মূলত সফিক উদ্দিনের কনিষ্ট পুত্র মনির উদ্দিনের ব্যক্তিগত একটি স্মৃতিচারণামূলক লেখার অনুলিখন)
পারিবারিক অ্যালবাম থেকে : সফিক উদ্দিন ও হবিবুন্নেসা  

রহুম সফিক উদ্দিন আহমেদ অতি সাধারণ এক ব্যক্তি ছিলেন| জনপ্রতিনিধি সাদৃশ্য কোনো কর্মকান্ড তার জীবলে ছিল না| অথবা বৌদ্ধিক বলে পরিচিতও ছিলেন না| তথাপি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবেশে আপন মাতার স্নেহ মমতায়  বাল্যকাল থেকে শিক্ষাগ্রহণে যে সংযম ও কষ্ট-সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে কাঙ্খিত লক্ষে নিজে প্রতিষ্ঠিত হন এবং পরবর্তী কালে পুত্র কন্যাদের প্রিতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন তার জন্য আপন জনদের কাছে তিনি নমস্য|

অলিখিত খন্ড খন্ড পারিবারিক সূত্র থেকে সংগ্রহ করে তার সম্মন্ধে চাল চিত্র প্রকাশের এই প্রয়াস মাত্র|

কাছাড় জেলার অধুনা শিলচর মহকুমার এক প্রত্যন্ত মৌজা দক্ষিণ কৃষ্ণপুর| এই মৌজার এক সাধারণ পরিবারে ১৮৯৪ সালে মরহুম সফিক উদ্দিনের জন্ম| তৎকালে এই প্রত্যন্ত মৌজাতে কৃষিযোগ্য জমির চেয়ে ঝোপ, জঙ্গল, জলাভূমি, ছোটোবড়ো টিলাভূমি বেশি ছিল| লোকবসতি ছিল অতি অল্প| নাথ যোগী সম্প্রদায়ের কিছু লোকের বসতি ছিল এই এলাকা| কাছাড় ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসার আগে কাচারী রাজার আমল থেকে সিলেট, জয়ন্তীয়া অঞ্চল থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু লোক নদীপথে আগর ব্যবসার উদ্যেশে এতদঞ্চলে এসে বরাক নদীর পাড়ে বসতি স্থাপন করেন|

১৮৮৩ সালে কাছাড় ডেপুটি কমিশনারের রেভিনিউ বিভাগের এক সংগ্রাহায়িত নথিতে পাওয়াযায়, তারা ১৩ সদস্যের পরিচয় সম্বলিত এক 'কবুলিয়ত নামা' দিয়ে ডেপুটি কমিশনারের কাছ থেকে বিভিন্ন শর্তে ১৫ বছরের মেয়াদে ত্রিমাসিক কর দিয়ে, ১ নম্বর মহালে (মৌজা দক্ষিণ কৃষ্ণপুর) আগর তেল নিষ্কাশনের জন্য অনুমতি লাভ করেন| ওই ব্যক্তিবর্গের অন্যতম দুলাইমিয়া বড়ভূঁইয়া, পিতা মালিমিয়া বড়ভূঁইয়া সফিক উদ্দিনের পূর্বপুরুষ বলে জানা যায়| সফিক উদ্দিনের পিতা ছিলেন ইন্জান আলী| ইন্জান আলীর পিতা জীবিত থাকাকালীন ইন্জান আলীর মৃত্যু হওয়ায় ইসলামিক নিয়মে সফিক উদ্দিন পিতার বিষয়-সম্পত্তির  অধিকার থেকে বঞ্চিত হন|

সফিক উদ্দিন বাল্যকাল   থেকে পড়াশুনার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন| তার মাতা পার্শবর্তী সোনাবাড়ীঘাট মৌজার অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবার থেকে ছিলেন| তিনি নিজের ও সন্তানদের হীনতর অবস্থা বিবেচনায় পুত্র সফিক উদ্দিন ও তার ছোট এক বোন নিয়ে পিতৃগৃহে চলে যান| ব্রিটিশ শাসনের প্রথম থেকে এই অঞ্চলের শিক্ষাদীক্ষা ও রাস্তাঘাটের অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হতে থাকে| দূরবর্তী নরসিংপুর মৌজায় এম ভি স্কুল প্রতিষ্টিত হয়ে প্রাথমিক থেকে ষষ্ঠ ম্যান পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়| সফিক উদ্দিনের মা, পুত্রকে এই স্কুলে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে জায়গীর রেখে পড়া চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন| অনুমান, ১৯০৩ সালে সফিক উদ্দিন এম ভি পাস্ করেন| সফিক উদ্দিনের মাতা পুত্রকে শিলচর সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন সেখান থেকে ১৯১২ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাস্ করেন|
পারিবারিক অ্যালবাম থেকে: মেট্রিক সার্টিফিকেট| 
তৎকালীন সময়ে মেট্রিক সার্টিফিকেট কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হত

এতদঞ্চলে কলেজের বিশেষ সুবিধা না থাকায় মাতার পরামর্শ মত কলকাতা গিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে আই এস সি কোর্সে ভর্তি হন| ডাক্তারি পড়ার আগ্রহ ছিল| বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নারকেলডাঙা  অঞ্চলে এক ছাত্রমেসে থেকে কলেজের পড়াশুনা করছিলেন| সফিক উদ্দিনের মাতা বহু কষ্ট স্বীকার করে পুত্রের কলেজের শিক্ষার খরচ যোগাড় করতেন কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে কলেজের ব্যয় নির্বাহ করতে অসমর্থ হওয়ায় সফিক উদ্দিন কলেজ ছেড়ে চলে আসেন| পরে কাছাড়ের কাঠিগরা স্কুলে ইংরেজি ও অংকের শিক্ষক পদে নিযুক্তি পেয়ে সেখানে চলে যান| সেখানে থাকাকালীন কিছু টাকার সংস্থান করে, আপন চাচা ও ভ্রাতা সম্পর্কিত একজনের কাছ থেকে নিজের পৈতৃক বাড়ির এক বিঘা দুই কাঠা পরিমান জমি ক্রয় করে ঘর তৈরীক্রমে নিজেদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন| 

ইতিমধ্যে সাংসারিক জীবন আরম্ভ করে  পুত্রকন্যাদি লাভ করেন| সেই সময় আসাম সরকারের অধীন কারা বিভাগে এসিস্টেন্ট জেলার পদে নিয়োগ পেয়ে গৌহাটি জেলে কাজে যোগ দেন| অর্থনৈতিক অবস্থার সামান্য উন্নতি  হলে তিনি পুত্র কন্যাদের শিক্ষার ব্যাপারে মনোযোগ দেন| স্ত্রী ও মাতার তথ্যাবধানে স্থানীয় এম ভি স্কুলে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন|

ক্রমে তিনি গৌহাটি জেল থেকে বদলি হয়ে বিভিন্ন সময়ে শিবসাগর, ডিব্রুগড়, ধুবড়ি জেলে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেলার পদে কাজ করেন ও পরে যোরহাট জেলে পদোন্নতি পেয়ে জেলার হিসাবে যোগ দেন; সেখান থেকে নগাঁও জেলে বদলি হন। সময় আনুমানিক ১৯৪২-৪৩ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের আতঙ্কজনক অবস্থা। ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন অত্যন্ত তীব্র। এই সময় সফিক উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র সিলেট এম সি কলেজ থেকে সম্মানের সাথে বি এ পাশ করেন।সেসময় যুদ্বে যোগদানের জন্য সরকারের তরফ থেকে আহ্ববান জানানো হয়। সফিক উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র, রফিক উদ্দিন, প্রথম শ্রেণীর কমিশনে (কিনস কমিশনার) সিলেকশন পেয়ে প্রাথমিক ট্রেনিং সমাপ্ত করে যুদ্ধক্ষেত্রে জয়েন করার কলের অপেক্ষা করছিলেন। ১৯৪৪ সালে প্রথম থেকেই নওগাঁ জেলে থাকাকালীন সফিক উদ্দিনের স্বাস্থ্য ক্রমশঃ খারাপ হতে শুরু করে। কারা কর্তৃপক্ষের থেকে সিভিল সার্জন পরীক্ষা করে শীঘ্র গল ব্লাডারের পাথর অপারেশন করার পরামর্শ দেন তাই তিনি চিকিৎসার জন্য শিলচর যাওয়া মনস্থ করেন। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বড় পুত্রকে যুদ্ধে যোগদানে বারণ করেন এবং শিলচর বদলির আবেদন করেন। আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় দীর্ঘ ছুটি নিয়ে শিলচর বাড়ি আসতে প্রস্তুত হলেন।  সফিক উদ্দিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুত্র শিলচর সরকারি বালক বিদ্যালয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছিলেন। এসময় শশুরের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ কৃষ্ণপুর মৌজার নাথ-বড়ভূঁইয়া পদবীর এক ব্যক্তির বাড়ি, পঞ্চাশ বিঘার উর্ধে জমি সহ ক্রয় করে নিজস্ব বাড়ি তৈরি ক্রমে সকল পুত্র কন্যাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। জুন মাসের প্রথম দিকে, জ্যেষ্ঠ পুত্র রফিক উদ্দিনকে নিয়ে শিলচর চলে আসেন। সেই সময় দিল্লির ভাইসরয় অফিস থেকে সফিক উদ্দিনকে ব্যক্তিগত সম্মানের জন্য খান সাহেব উপাধি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
 
সরকার থেকে প্রাপ্ত সনদ, সাল ১৯৪৪  

সংবাদটি সকলকে আনন্দ দিলেও সফিক উদ্দিনের স্বাস্থ্য নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন ছিলেন।  আত্মীয় স্বজনদের পরামর্শ মতে তিনি জ্যেষ্ঠ পুত্রকে নিয়ে সিলেট হয়ে শিলং পৌছে সেখানকার রবার্ট হসপিটালের প্রখ্যাত ডাক্তার হিউজেসের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার পরীক্ষা করে  শীঘ্র অপারেশনের ব্যবস্থা নেন। ১৯শে জুন অপারেশন করে বৃহৎ একটা গল ব্লাডার স্টোন বাহির করেন। দীর্ঘদিনের অসুখ হওয়ায়, গল ব্লাডার সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হয় ও ২০ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। সেই সময় শিলচর - শিলং যাতায়াত সহজ ছিল না, ছিল এক সপ্তাহের পথ। শিলংয়ে পরিচিত কিছু লোকের সহায়তায় সফিক উদ্দিনকে লাম্পাবিং মুসলিম কবরস্তানে দাফন করা হয়।

পারিবারিক অ্যালবাম থেকে শিলং কবরস্তানের ছবি। ২০১০ সালে নেওয়া ছবি। কবর অচিহ্নিত

বাড়ির শোকাবহ অবস্থা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসার পর, পুত্র রফিক উদ্দিন প্রাদেশিক সরকারের অধীন টেক্সটাইল বিভাগে উপপরিদর্শক চাকরি পান ও বাড়ির হাল ধরেন। ক্রমে, দ্বিতীয় পুত্র বশির উদ্দিন, সিলেট এম সি কলেজ থেকে আই এস্সি  পাশ করে ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস ডিগ্রি লাভ করে  ভারতীয় সেনার  মেডিকেল  বিভাগে ১৭ রাজপূত রেজিমেন্টে যোগ দেন| অল্প কয়েকবছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করে বশির উদ্দিন, সেনা বাহিনী ছেড়ে ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজ থেকে চক্ষু চিকিৎসায় পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করে আসাম সরকারের চাকরিতে যোগ দেন। 


রফিক উদ্দিন আহমেদ, বর্তমানে নিউয়র্কের বাসিন্দা 
  
1947 এ দেশভাগের সময় রফিক উদ্দিন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে বদলি হয়ে চলে যান। পরবর্তীতে সেখানকার সরকারের মনোনয়ন পেয়ে আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডমিনিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে সরকারের জল ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন পরিষদে ডেপুটি চিফ হিসাবে নিযুক্তি পান ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ হওয়ার পর উক্ত সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করে অবসর গ্রহন করেন।


পারিবারিক অ্যালবাম থেকে। মরহুম সফিক  উদ্দিনের দ্বিতীয় কন্যার বিবাহের নিমন্ত্রণপত্র

সফিক উদ্দিনের দ্বিতীয় পুত্র ডঃ বশির উদ্দিন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। তিনি ধুবড়ি হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল সুপার হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত হন। তার তিন কন্যা ও সকলেই উচ্চ শিক্ষিতা ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত।

সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন ডঃ বশির উদ্দিন আহমেদ| ছবিটি সম্ভবত ১৯৫৮-৫৯ সালের 


তৃতীয় পুত্র রশিদ উদ্দিন আহমেদ একটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ কয়েকবছর চিকিৎসাধীন থাকায় কলেজশিক্ষায় বিশেষ অগ্রসর হতে পারেন নি। সুস্থ হওয়ার পর তিনি এলাকায় সমাজসেবা ও শিক্ষা প্রসারে মনোনিবেশ করেন। 

রশিদ উদ্দিন আহমেদ ও মবু আহমেদ


রশিদ উদ্দিন আহমেদের সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রবল ছিল। সোনাবাড়ীঘাটের গ্রামবাসীদের আগ্রহে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে প্রথমে একটি এম ই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন - যেটাকে ক্রমশঃ উন্নত করে হাইস্কুলে রূপান্তরিত করেন। বিরাট এই অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের মেট্রিক পর্যন্ত পড়ার এটাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান রূপে গণ্য হয়। সকল শ্রেণীর জনসাধারণের সহযোগিতা ও স্থানীয় বিধায়ক সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিধায়ক মইনুল হক চৌধুরীর সাহায্যে  ও পরামর্শে স্কুলটির ক্রমশঃ উন্নতি হয়ে মইনুল হক চৌধুরী হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। যে স্কুলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালে হাতে গুনা কয়েকজন ছাত্র নিয়ে, এম ই স্কুল রূপে, সেটা সাতের দশকের শেষে কয়েক শত ছাত্র নিয়ে হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুল হিসাবে আজও এলাকার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। রশিদ উদ্দিনকে দুবার স্কুল পরিচালন কমিটির প্রধান মনোনীত করা হয়েছিল। তার বি এ ডিগ্রি না থাকায়, হাই স্কুলের এম ই সেকশনের শিক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সকলের কাছে মাস্টার সাহেব অথবা রশিদ মাস্টার বলে পরিচিত ছিলেন।
পারিবারিক এলবাম থেকে|  স্কুল পরিচালন সম্পর্কিত কোনো এক সভা
(সম্ভবত সত্তরের দশকের ছবি)


মাস্টার সাহেব বা রশিদ মাস্টার গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের সংস্কার ও স্কুলগৃহ নবরূপে নির্মানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি তার জন্মের সমসাময়িক বা আগের। 

২১৯ নম্বর দক্ষিণ কৃষ্ণপুর নিম্ন-প্রাথমিক বিদ্যালয় গৃহ । সাম্প্রতিক ছবি (২০১৯)

দক্ষিণ কৃষ্ণপুরের প্রবীণদের থেকে জানা যায় গ্রামের প্রথম মসজিদ স্থাপন হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, বরাক নদীর পাড়ে। পরবর্তীতে বন্যা, নদীভাঙ্গন ইত্যাদির কারণে মসজিদটি গ্রামের পশ্চিমদিকে স্থাপন করা হয়। দূরদর্শী কিছু গ্রামবাসী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মসজিদের পাশেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্টান স্থাপন করেন, যাকে মক্তব বলা হত। প্রথম দিকে মূলত কিছুটা অক্ষরজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল, সরকারি রেকর্ড মতে স্থাপিত ১৯২৮ সালে। কয়েকদশক পরে মক্তবে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন গৃহ ও অধিক জায়গার দরকার হয়। স্থানীয় মুরব্বিদের অনুরোধে রশিদ উদ্দিন  ষাটের দশকে, নিজেদের পারিবারিক জমিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান নতুন করে স্থাপন করতে গ্রামবাসীদের সাথে উদ্যোগী হন। মক্তব ও পাঠশালা - দুই নামেই তাকে ডাকা হত|  ১৯৮৩ সালে, ঝড়ে স্কুলগৃহ ভেঙে যাওয়ার পরে, জনগণের অনুরোধে স্কুলগৃহটি রশিদ উদ্দিনেরই দানকৃত অন্য জমিতে, গ্রামের কেন্দ্রস্থলের দিকে, নবরূপে স্থাপিত হয়। স্কুলটি এখন ২১৯ নম্বর দক্ষিণ কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। 


মনির উদ্দিন আহমেদ

সফিক উদ্দিনের চার পুত্রদের মধ্যে সর্বকনিষ্ট পুত্র মনির উদ্দিন। তিনি শিলচর গুরুচরণ কলেজ থেকে আই এস সি পাশ করেন। উক্ত কলেজেই বি এ পড়াকালীন আসাম সরকারের সহকারী পরিদর্শক  চাকরিতে যোগ দেন| শিক্ষানুরাগ ও জ্ঞানচর্চায় তার আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদানের জন্য তিনি গ্রামবাসী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে খুবই শ্রদ্দেয়। তিনি আসাম সরকারের খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগে সততা ও সুনামের সঙ্গে চাকরি করে অবসর গ্রহণ করেছেন। 



সফিক উদ্দিনের চার কন্যার মধ্যে বড়জন ছিলেন বিদূষী মহিলা, তিনি কাজিডহরের মরহুম ডঃ মসাইদ আলীর সহধর্মিনী।  মসাইদ আলী ছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর সোনাই অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায় থেকে একমাত্র পাশ করা ডাক্তার। তিনি বেরি হোয়াইট  মেডিকেল স্কুল (পরবর্তীতে যেটা ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজ) থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন। ডঃ আলী শিলচর সিভিল হাসপাতালের সুপার ছিলেন।

পরিবারের এককন্যা বিবাহ সূত্রে বাংলাদেশবাসী। একমাত্র জীবিত এক কন্যা বর্তমান হাইলাকান্দিবাসি। সর্বকনিষ্ট কন্যা আটের দশকে অকাল প্রয়াত।


শত বৎসরের আগে সফিক উদ্দিন নামের যে মহীরুহের জন্ম হয়েছিল শিলচরের শহরের অদূরে কৃষ্ণপুর গ্রামে, আজ তার শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবীতে।